আমরা যারা হিন্দু ধর্মাবলম্বী, তারা কম বেশি সবাই ভগবান শ্রী বিষ্ণু এবং তার দশ অবতার সম্বন্ধে জানি।তিনি যুগে যুগে পৃথিবীতে অবতার রূপে এসে পাপী অসুরদের দমন করেন।তিনি চারটি যুগে নয়টি অবতার রূপে এসেছেন।কলিযুগের শেষে তিনি কল্কি অবতার রূপে পৃথিবীতে আসবেন।সকল পাপীদের ধংস করে সত্য যুগের সূচনা করবেন।
বিষ্ণু ঃ (সংস্কৃত: विष्णु) শ্রী বিষ্ণু ঈশ্বরের পাঁচটি প্রধান রূপের অন্যতম। আবার তৈত্তিরীয় শাখা ও ভগবদ্গীতা আদি শ্রুতিশাস্ত্রে তাঁকে সর্বোচ্চ ঈশ্বরের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।
ভগবান শ্রী বিষ্ণু হলেনপরমাত্মা ও পরমেশ্বর । তিনি হলেন সর্ব জীব ও সর্ববস্তুতে পরিব্যাপ্ত সত্ত্বা; অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ তথা অনাদি অনন্ত সময়ের প্রভু; সকল অস্তিত্বের স্রষ্টা ও ধ্বংসকারী; বিশ্বচরাচরের ধারক, পোষক ও শাসক এবং বিশ্বের সকল বস্তুর উৎসপুরুষ।
পুরাণ অনুসারে, বিষ্ণুর গাত্রবর্ণ ঘন মেঘের ন্যায় নীল (ঘনশ্যাম); তিনি চতুর্ভূজ এবং শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্মধারী। ভগবদ্গীতা গ্রন্থে বিষ্ণুর বিশ্বরূপেরও বর্ণনা আছে।
বিষ্ণু সহস্রনামে সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মার উক্তিতে বিষ্ণুকে "সহস্রকোটি যুগ ধারিনে" বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর অর্থ, বিষ্ণুর অবতারগণ সকল যুগেই জন্মগ্রহণ করে থাকেন। ভগবদ্গীতা অনুসারে, ধর্মের পালনএবং দুষ্টের দমন ও পাপীর ত্রাণের জন্য বিষ্ণু অবতার গ্রহণ করেন। হিন্দু ধর্মে বিষ্ণুকে বিষ্ণু বা রাম, কৃষ্ণ প্রমুখ অবতারের রূপে পূজা করা হয়।
হিন্দুধর্মের ত্রিমূর্তি ধারণায় ব্রহ্মাকেবিশ্বচরাচরের সৃষ্টির প্রতীক, বিষ্ণুকে স্থিতির প্রতীক ও শিবকে ধ্বংসের প্রতীক রূপে পূজা করা হয়। ভাগবত পুরাণ মতে, ত্রিমূর্তির এই তিন দেবতার মধ্যে বিষ্ণুর পূজাই সর্বাপেক্ষা অধিক ফলপ্রদ।বিষ্ণু পুরাণ অনুসারে ভগবান বিষ্ণুই সর্বচ্চো ঈশ্বর । ভগবান বিষ্ণু থেকেই ব্রহ্মা এবং শিবের উৎপত্তি ।
==ধ্যানমন্ত্র==ওমঃ নমোঃ ব্রাক্ষন্য দেবায় গোঃ ব্রাক্ষন্য হিতায়ঃ চঃ জগঃধ্বিতায় কৃষ্ণাাায়ঃ নমঃ নমঃ
দশাবতার
বিষ্ণু নয়বার পৃথিবী উদ্ধারের জন্য আবির্ভূত হয়েছিলেন এবং কলিযুগে কল্কি অবতার হয়ে আসবেন বলে বিশ্বাস করা হয়। এই দশটি অবতার যথাক্রমে মৎস্য, কূর্ম , বরাহ, নৃসিংহ, বামন, পরশুরাম, রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ এবং কল্কি।
নিম্নে দশ অবতারের বর্ণনা দেওয়াা হল।
মৎস্যঃ(সংস্কৃত: मत्स्य,) হল দেবতা বিষ্ণুর মাছরূপী অবতার, যা কূর্ম-এর পূর্ববর্তী অবতার। সাধারণতঃ এই অবতারটিকে বিষ্ণুর প্রথম অবতার হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। পুরাণে বর্ণিত হয়েছে, মৎস্য পৃথিবীর প্রথম মানুষ মনুকে এক বিরাট বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করেন। মৎস্য অবতারের শরীরের উর্ধাংশ পুরুষ মানুষের ও নিম্নাংশ মাছ আকৃতির।
- ভগবান শ্রী বিষ্ণু মৎস্য অবতার রূপে মনুকে বিধ্বংসী বন্যা সম্পর্কে পূর্বসতর্ক করে এবং তাকে পৃথিবীর সমস্ত শস্য ও জীবসমূহকে একটি নৌকায় জড়ো করতে বলে। বন্যার ক্ষণ উপস্থিত হলে মৎস্য মনু, সপ্তর্ষি ও জিনিসপত্র সমেত নৌকাটিকে টেনে নিয়ে রক্ষা করে। কিন্তু কাহিনীর পরবর্তী সংস্করণে দেখানো হয়েছে, পবিত্র বেদগুলি একটি অসুর চুরি করে এবং মৎস্য ঐ অসুরকে বধ করে বেদগুলি উদ্ধার করেন।
মৎস্য পুরাণ অনুসারে, প্রাগৈতিহাসিক দ্রাবিড় রাজ্যের বিষ্ণুভক্ত রাজা সত্যব্রত (যিনি পরে মনু নামে পরিচিত হন) একদিন নদীর জলে হাত ধুচ্ছিলেন। এমন সময় একটি ছোটো মাছ তাঁর হাতে চলে আসে এবং তাঁর কাছে প্রাণভিক্ষা চায়। তিনি মাছটিকে একটি পাত্রে রাখেন। কিন্তু মাছটি ক্রমশ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হতে থাকে। তিনি সেটিকে প্রথমে একটি পুষ্করিণীতে, পরে নদীতে এবং শেষে সমুদ্রে ছেড়ে দেন। কিন্তু কোনো ফল হয় না। সেটি এতটাই বৃদ্ধি পায় যে সকল আধারই পূর্ণ হয়ে যায়। শেষে মাছটি বিষ্ণুর রূপে আত্মপ্রকাশ করে সত্যব্রতকে জানান যে সাত দিনের মধ্যে প্রলয় সংঘটিত হবে এবং সকল জীবের বিনাশ ঘটবে। তাই সত্যব্রতকে নির্দেশ দেওয়া হয় যে সকল প্রকার ঔষধি, সকল প্রকার বীজ, সপ্তর্ষি, বাসুকি নাগ ও অন্যান্য প্রাণীদের সঙ্গে নিতে।
প্রলয় সংঘটিত হলে মৎস্যরূপী ভগবান শ্রী বিষ্ণু পূর্বপ্রতিশ্রুতি অনুসারে পুনরায় আবির্ভূত হন। তিনি সত্যব্রতকে একটি নৌকায় আরোহণ করতে বলেন এবং তাঁর শিঙে বাসুকি নাগকে নৌকার কাছি হিসেবে বাঁধতে বলেন।এভাবে তিনি সৃষ্টিকে ধংসের হাত থেকে রক্ষা করলেন।
কূর্ম অবতারঃকূর্ম হলেন ভগবান বিষ্ণুেের দ্বিতীয় অবতার । এর পূর্বের অবতার মৎস্য এবং পরের অবতার বরাহ। মৎস অবতারের মত এটিও সত্যযুগের অবতার । কূর্ম অবতারের জন্য উৎসর্গীকৃত মন্দির হল হল অন্ধপদেশলার কুর্মাই মন্দির ও শ্রীকুর্মাম মন্দির ।
একদা ঋষি দেবরাজ ঔ দিব্য পুষ্পমালা উপহার দিয়েছিলেন । ইন্দ্র সেই মালা সাদরে গ্রহণ করে তাঁর বাহন হমাথায় রাখেন। কিন্তু ঐরাবত সেই মালা তার শুঁড়ে জড়িয়ে মাটিতে ফেলে নষ্ট করে দেয়। এতে ঋষি ক্রুদ্ধ হয়ে ইন্দ্রকে শ্রীহীন হবার অভিশাপ দেন। ব্রহ্মা তখন পুনরায় অমৃতপ্রাপ্তির জন্য অসুরদের সাহায্যে সমুদ্রমন্থনের পরামর্শ দেন । মন্থন কালে মন্দর পর্বত সমুদ্রে ঢুকে যাচ্ছিল তাই তখন ভগবান বিষ্ণু কূর্ম রূপ ধারণ করে মন্দর পর্বতকে তাঁর পৃষ্ঠে ধারণ করেন। এভাবে পুনরায় অমৃত প্রাপ্তি হয়।
পরবর্তী poste বাকি আট অবতারের বর্ননা দিব
No comments:
Post a Comment